এটা গোপন কোনো কথা নয় যে মানুষ যতটা সম্ভব দীর্ঘজীবী হতে চায়। কিন্তু বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বিশ্বে মানুষের গড় আয়ু ৭২ বছর। খুব বেশি না, তাই না? যদিও আপনাকে বুড়িয়ে দেওয়ার জন্য কোন কোন বিষয় ভূমিকা পালন করে সেগুলো যদি জানা থাকে তাহলে জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এনে দীর্ঘজীবী হওয়া অসম্ভব কিছু না।
আমরা এখনো অমরত্বের সূত্র আবিষ্কার করতে পারিনি, কিন্তু আপনাকে এমন একজন ব্যক্তির দীর্ঘজীবনের গোপনীয়তা ফাঁস করতে যাচ্ছি যিনি ১১৪ বছর বেঁচে ছিলেন।
দীর্ঘায়ুর জন্য প্রয়োজনীয় উপাদানসমূহ
বার্নার্ডো লাপালো জন্মেছিলেন ১৯০১ সালে এবং ২০১৫ সালে মারা যান। তার এই দীর্ঘ জীবনের জন্য খাওয়া-দাওয়াকেই ক্রেডিট দিয়েছেন। তিনি বলেন, “আমাকে সবাই জিজ্ঞাসা করে কিভাবে আমি এতদিন বেঁচে আছি। আমি বলি, পুরনো একটা প্রবাদ রয়েছে, তুমি যা খাও, তুমি তাই হও।”
তার প্রতিদিনের খাবারে অনেকগুলো অর্গানিক সবজি এবং ফল অন্তর্ভুক্ত ছিলো। কিন্তু এর মধ্যে ৫টি বিশেষ খাবারকে তিনি দীর্ঘজীবনের মূল রহস্য হিসাবে মনে করতেন। আর নিচে আমরা এর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। চলুন পড়া শুরু করা যাক।
সকল মসলার রানী- দারুচিনি
দারুচিনি কেবল সুস্বাদু মসলা নয়। এটি তার জাদুকরী এবং শক্তিশালী ঔষধিগুণের জন্যও বিশেষ ভাবে পরিচিত। ক্যানসার, হৃদরোগ এবং ব্যাকটেরিয়া ও ফাঙ্গাল ইনফেকশনের হাত থেকে বাঁচাতে দারুচিনির সুনাম সর্বত্র। এটি এইচআইভি ভাইরাসের সাথেও লড়ায় করতে পারে।
স্বর্গের উপহার- চকলেট
চকলেট খেলেও আমাদের স্বাস্থ্য ভালো থাকে। রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল কমানো থেকে শুরু করে স্মৃতি ও বুদ্ধিমত্তা নষ্ট হওয়ার হাত থেকেও বাঁচায় এই চকলেট। যদি আপনি এই অসাধারণ খাবারটি স্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা না করেই এড়িয়ে যান তাহলে আজ থেকেই খাওয়া শুরু করুন।
প্রাকৃতিক অ্যান্টিবায়োটিক- রসুন
আলঝেইমার্স ডিজিজ ও ডিমেনশিয়া প্রতিরোধ থেকে শুরু করে হার্ট ফেইলুয়্যরের ঝুঁকি কমানো, দেহ বিষমুক্ত করা এবং বিভিন্ন অসুস্থতার বিরুদ্ধে লড়াই করা খাবারটির নাম রসুন। রসুন খেতে পছন্দ না করলেও খাদ্য তালিকায় যোগ করুন প্রাকৃতিক এই অ্যান্টিবায়োটিকটি। এতে আপনি যেমন রোগমুক্তও থাকবেন, তেমনি আপনার দীর্ঘজীবনও নিশ্চয়তা পাবে।
সব রোগের ওষুধ- মধু
মৌমাছির তৈরি এই অসাধারণ সুস্বাদু খাবারটি ৫০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে ওষুধ হিসাবেও ব্যবহার হয়ে আসছে। এর মধ্যে রয়েছে অসংখ্য রোগ নিরাময়কারী প্রাকৃতিক উপাদান এবং অ্যান্টিসেপ্টিক, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল উপাদানের জন্য স্বাস্থ্যের জন্যও খুব উপকারী। মধু মেয়েদের প্রসাধনী হিসাবেও ব্যবহার হয়ে থাকে।
সঞ্জীবনী তেল- অলিভ অয়েল
জলপাই তেলে সর্বাধিক পরিমাণে রয়েছে MUFAs ফ্যাট যা আমাদের রক্তচাপ, স্ট্রোক, হার্টের রোগ এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকির কমাতে সাহায্য করে। এর স্কোয়ালেন এবং টেরপেনয়েড নামক দুটি যৌগ ক্যান্সার প্রতিরোধে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পলি ও মোনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট ডায়াবেটিস আটকাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
এই তেল রক্তে গ্লুকোজ কমায়, কার্বোহাইড্রেট শোষণ হ্রাস করে, এবং ইনসুলিনে সংবেদনশীলতা বৃদ্ধি করে। হরমোনের ভারসাম্য এবং দেহের বিভিন্ন প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। মানসিক রোগ এবং ডিপ্রেশনের মোকাবিলা করে। জলপাই তেলের অ্যান্টিঅক্সিডেন্টগুলি সেলুলার স্ট্রেস কমিয়ে অকাল বার্ধক্য রুখে দেয়। আমরা মনে করি এই প্রেক্ষিতে অন্য তেলের পরিবর্তে অলিভ অয়েল ব্যবহার করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
বার্নার্ডো লাপালোর কিছু টিপস
বার্নার্ডো লাপালো নিশ্চিত করেছেন যে তিনি তার জীবনে একদিনের জন্যও অসুস্থ হননি। উপরের খাবারগুলো খাওয়া ছাড়াও তিনি তার বাবার একটি উপদেশ সব সময় মেনে চলতেন। তার বাবা বলেছিলেন “কখনো লাল মাংস অর্থাৎ গরু, খাসি, মহিষ, শুকর ইত্যাদি খাওয়া যাবে না। সবসময় ভাজাপোড়া জাতীয় খাবার থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।”
তার আরো কিছু স্বাস্থ্যকর অভ্যাসের মধ্যে ছিলো সকালে হাঁটা, দাবা খেলা, পাজেলের সমাধান করা ইত্যাদির কথাও তার বাবার পরামর্শ মেনেই করতেন। বার্নার্ডো লাপালো বলেন, “আমার মনে পড়ে, বাবা এইগুলো নিয়ে আমার যখন ৮ বছর বয়স হলো তখন বলেছিলেন।
আপনার কোনো আত্মীয় কী এমন দীর্ঘজীবী হয়েছেন? আপনি যদি তার দীর্ঘায়ুর রহস্য জানেন তাহলে আমাদের সাথে শেয়ার করুন নিচের কমেন্ট বক্সে।