কাঁচা ছোলার গুণ স’ম্পর্কে আম’রা সবাই কমবেশি জানি। প্রতি ১০০ গ্রাম ছোলায় আমিষ প্রায় ১৮ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট প্রায় ৬৫ গ্রাম, ফ্যাট মাত্র ৫ গ্রাম, ২০০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ‘এ’ প্রায় ১৯২ মাইক্রো’গ্রাম এবং প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন বি-১ ও বি-২ আছে। ছোলায় বিভিন্ন প্রকার ভিটামিন, খনিজ লবণ, ম্যাগনেশিয়াম ও ফসফরাস রয়েছে।
উচ্চমাত্রার প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার ছোলা। কাঁচা, সেদ্ধ বা তরকারি রান্না করেও খাওয়া যায়। কাঁচা ছোলা ভিজিয়ে, খোসা ছাড়িয়ে, কাঁচা আদার স’ঙ্গে খেলে শ’রীরে একই স’ঙ্গে আমিষ ও অ্যান্টিবায়োটিক যাবে। আমিষ মানুষকে শ’ক্তিশালী ও স্বা’স্থ্যবান বানায়। আর অ্যান্টিবায়োটিক যেকোনো অসু’খের বি’রুদ্ধে যু’দ্ধ করে। জে’নে নিন ছোলার কিছু স্বা’স্থ্যগুণের কথা
১. ডাল হিসেবে: ছোলা পুষ্টিকর একটি ডাল। এটি মলিবেডনাম এবং ম্যাঙ্গানিজ এর চমৎকার উৎস। ছোলাতে প্রচুর পরিমাণে ফলেট এবং খাদ্য আঁশ আছে সেই সাথে আছে আমিষ, ট্রিপট্যোফান, কপার, ফসফরাস এবং আয়রণ।
২. হৃদরো’গের ঝুঁ’কি কমাতে: অস্ট্রেলিয়ান গবেষকরা দেখিয়েছেন যে খাবারে ছোলা যুক্ত করলে টোটাল কোলেস্টেরল এবং খা’রাপ কোলেস্টেরল এর পরিমাণ কমে যায়। ছোলাতে দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় উভ’য় ধ’রনের খাদ্য আঁশ আছে যা হৃদরো’গে আক্রা’ন্ত হওয়ার ঝুঁ’কি কমিয়ে দেয়। আঁশ, পটাসিয়াম, ভিটামিন ‘সি’ এবং ভিটামিন বি-৬ হৃদযন্ত্রের স্বা’স্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে। ফলে হৃদরো’গের ঝুঁ’কি কমে যায়। এর ডাল আঁশসমৃদ্ধ যা র’ক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমাতে সাহায্য করে। এক সমীক্ষায় দেখা গেছে, যারা প্রতিদিন ৪০৬৯ মিলিগ্রাম ছোলা খায় হৃদরো’গ থেকে তাদের মৃ’ত্যুর ঝুঁ’কি ৪৯% কমে যায়।
৩. র’ক্তচা’প নি’য়ন্ত্রণে: আমেরিকান মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জার্নালে প্র’কাশিত একটি গবে’ষণায় দেখানো হয় যে যে সকল অল্পবয়সী না’রীরা বেশি পরিমাণে ফলিক এসিডযুক্ত খাবার খান তাদের হাইপারটেনশন এর প্র’বণতা কমে যায়। যেহেতু ছোলায় বেশ ভাল পরিমাণ ফলিক এসিড থাকে সেহেতু ছোলা খেলে র’ক্তচা’প নি’য়ন্ত্রণে রাখা সহজ হয়। এছাড়া ছোলা বয়সসন্ধি পরবর্তীকালে মেয়েদের হা’র্ট ভাল রাখতেও সাহায্য করে।
৪. র’ক্ত চলাচল: অপর এক গবে’ষণায় দেখা গেছে যে যারা প্রতিদিন ১/২ কাপ ছোলা, শিম এবং মটর খায় তাদের পায়ের আর্টারিতে র’ক্ত চলাচল বেড়ে যায়। তাছাড়া ছোলায় অবস্থিত আইসোফ্লাভন ইস্কেমিক স্ট্রোকে আক্রা’ন্ত ব্য’ক্তিদের আর্টারির কার্যক্ষ’মতাকে বাড়িয়ে দেয়।
৫. ক্যা’ন্সার রো’ধে: কোরিয়ান গবেষকরা তাদের গবে’ষণায় প্রমাণ ক’রেছেন যে বেশি পরিমাণ ফলিক এসিড খাবারের সাথে গ্রহণের মাধ্যমে না’রীরা কোলন ক্যা’ন্সার এবং রেক্টাল ক্যা’ন্সার এর ঝুঁ’কি থেকে নিজিদেরকে মু’ক্ত রাখতে পারেন। এছাড়া ফলিক এসিড র’ক্তের অ্যালার্জির পরিমাণ কমিয়ে এ্যজমা’র প্র’কোপও কমিয়ে দেয়।আর তা্ই নিয়মিত ছোলা খান এবং সুস্হ থাকুন।
৬. রমজানে: রমজান মাসে ইফতারের সময় জনপ্রিয় খাবার হলো ছোলা। আমাদের দেশে ছোলার ডাল নানাভাবে খাওয়া হয়। দে’হকে করে দৃঢ়, শ’ক্তিশালী, হাড়কে করে মজবুত, রো’গ প্র’তিরো’ধক্ষ’মতা বৃ’দ্ধির জন্য এর ভূমিকা অপরিহার্য। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম।
৭. কোলেস্টেরল: ছোলা শ’রীরের অপ্রয়োজনীয় কোলেস্টেরল কমিয়ে দেয়। ছোলার ফ্যাট বা তেলের বেশির ভাগ পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, যা শ’রীরের জন্য ক্ষ’তিকর নয়। প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট ছাড়া ছোলায় আরও আছে বিভিন্ন ভিটামিন ও খনিজ লবণ।
৮. কোষ্ঠকাঠিন্যে দূ’র করে: ছোলায় খাদ্য-আঁশও আছে বেশ। এ আঁশ কোষ্ঠকাঠিন্য সারায়। খাবারের আঁশ হ’জম হয় না। এভাবেই খাদ্যনালী অতিক্রম ক’রতে থাকে। তাই পায়খানার পরিমাণ বাড়ে এবং পায়খানা নরম থাকে।
৯. ডায়াবেটিসে উপকারী: ১০০ গ্রাম ছোলায় আছে: প্রায় ১৭ গ্রাম আমিষ বা প্রোটিন, ৬৪ গ্রাম শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট এবং ৫ গ্রাম ফ্যাট বা তেল। ছোলার শর্করা বা কার্বোহাইডেটের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম। তাই ডায়াবেটিক রো’গীদের জন্য ছোলার শর্করা ভাল। প্রতি ১০০ গ্রাম ছোলায় ক্যালসিয়াম আছে প্রায় ২০০ মিলিগ্রাম, লৌহ ১০ মিলিগ্রাম, ও ভিটামিন এ ১৯০ মাইক্রো’গ্রাম। এছাড়া আছে ভিটামিন বি-১, বি-২, ফসফরাস ও ম্যাগনেসিয়াম। এর সবই শ’রীরের উপকারে আসে।
১০. যৌ’নশ’ক্তি বৃ’দ্ধিতে: যৌ’নশ’ক্তি বৃ’দ্ধিতে এর ভূমিকা যথেষ্ট গু’রুত্বপূর্ণ। শ্বা’সনালিতে জমে থাকা পুরোনো কাশি বা কফ ভালো হওয়ার জন্য কাজ করে শুকনা ছোলা ভাজা। ছোলা বা বুটের শাকও শ’রীরের জন্য ভীষণ উপকারী। প্রচুর পরিমাণে ডায়াটারি ফাইবার বা আঁশ রয়েছে এই ছোলায় ও ছোলার শাকে। ডায়াটারি ফাইবার খাবারে অবস্থিত পা’তলা আঁশ, যা কো’ষ্ঠকাঠিন্য দূ’র করে। তাই শুধু রমজান মাস নয়, ১২ মাসেই ছোলা হোক আপনার স’ঙ্গী।
১১. র’ক্তের চর্বি কমায়ঃ ছোলার ফ্যাটের বেশিরভাগই পলি আনস্যাচুয়েটেড। এই ফ্যাট শ’রীরের জন্য মোটেই ক্ষ’তিকর নয়, বরং র’ক্তের চর্বি কমায়।
১২. অস্থির ভাব দূ’র করেঃ ছোলায় শর্করার গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের পরিমাণ কম থাকায় শ’রীরে প্রবেশ করার পর অস্থির ভাব দূ’র হয়।
১৩. রো’গ প্র’তিরো’ধ করেঃ কাঁচা ছোলা ভিজিয়ে কাঁচা আদার স’ঙ্গে খেলে শ’রীরে আমিষ ও অ্যান্টিবায়োটিকের চা’হিদা পূরণ হয়। আমিষ মানুষকে শ’ক্তিশালী ও স্বা’স্থ্যবান বানায় এবং অ্যান্টিবায়োটিক যে কোনো অসু’খের জন্য প্র’তিরো’ধ গড়ে তোলে।
১৪. জ্বা’লাপোড়া দূ’র করেঃ সালফার নামক খাদ্য উপাদান থাকে এই ছোলাতে। সালফার মাথা গরম হয়ে যাওয়া, হাত-পায়ের তলায় জ্বা’লাপোড়া কমায়।
১৫. মেরুদ’ণ্ডের ব্য’থা দূ’র করেঃ এছাড়াও এতে ভিটামিন ‘বি’ও আছে পর্যা’প্ত পরিমাণে। ভিটামিন ‘বি’ কমায় মেরুদ’ণ্ডের ব্য’থা, স্নায়ুর দু’র্বলতা।
ছোলা অত্যন্ত পুষ্টিকর। এটি আমিষের একটি উল্লেখযোগ্য উৎস। এতে আমিষ মাংস বা মাছের পরিমাণের প্রায় সমান। তাই খাদ্যতালিকায় ছোলা থাকলে মাছ মাংসের প্রয়োজন পরে না। ত্বকে আনে মসৃণতা। কাঁচা ছোলা ভীষণ উপকারী। তবে ছোলার ডালের তৈরি ভাজা-পোড়া খাবার যত কম খাওয়া যায় ততই ভালো। তাই হ’জমশ’ক্তি বুঝে ছোলা হোক পরিবারের শ’ক্তি।