পৃথিবীর সবচেয়ে মধুর, আস্থার এক অবিচল শক্তি এবং হাজারটা বিষণ্নতার দিনে এক স্বস্তির নাম মা। আমি, আপনি, আমাদের সবাই যখন পৃথিবীতে আসার অপেক্ষায় ঠিক তখন থেকেই আমাদের পরম মায়ায় এবং পরম মমতায় আগলে রাখার নিরন্তর চেষ্টা শুরু হয় একেকজন মায়ের।
কিন্তু বৃদ্ধ বয়সে ক’জনই বা আমরা মাকে পরম মমতায় আগলে রাখি এবং সেবা করি?
মায়ের প্রতি সন্তানদের নিঃস্বার্থ ভালোবাসার নজির অনেক থাকলেও ফরিদপুরের চর টেপাখোলা উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী তৈয়বুর রহমান স্বপনের মতো ক’জনই বা মাকে এভাবে ভালোবাসতে পারেন। স্বপনের মায়ের বয়স ৯৬ বছর। তার প্রিয় খাবার দুধ-ভাত ও কলা। বয়সের কারণে নিজ হাতে খাওয়ার শক্তিটুকু তিনি হারিয়ে ফেলেছেন।
কিন্তু তাতে কী, ছেলে যে তাকে তার প্রিয় খাবার থেকে একদিনও বঞ্চিত করেননি। প্রতিদিন স্কুল থেকে ফিরে পরম যত্নে নিজ হাতে মাকে ভাতের সাথে দুধ আর কলা মিশিয়ে খাওয়ান স্বপন। শুধু কী খাওয়ানো! প্রিয় মাকে নিয়মিত গোসল করানো এবং সময়মতো ওষুধ খাওয়ানোর কাজটাও তিনি করেন।
মা যে পৃথিবীর সবচেয়ে অমূল্য সম্পদ সেই উপলব্ধি আছে ক’জন সন্তানের। এটা উপলব্ধি করতে পেরেছেন বলেই স্বপন তার মায়ের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। স্বপনের মতো মায়ের প্রতি প্রত্যেক সন্তানের ভালোবাসা এরকমই হওয়া উচিৎ। তাই নয় কি!
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, একবার একজন লোক মহানবির (সা.) কাছে জিজ্ঞাসা করেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! মানবজাতির মধ্যে কোন ব্যক্তি আমার নিকট সদয় ব্যবহার ও উত্তম সাহচর্যের সবচেয়ে বেশি উপযুক্ত?’ উত্তরে তিনি (সা.) বললেন, ‘তোমার মা’। লোকটি পুনরায় জিজ্ঞাসা করলো, ‘এবং তারপর?’ তিনি (সা.) উত্তর দিলেন, ‘তোমার মা’। লোকটি আবার জিজ্ঞাসা করলো, ‘এবং তারপর’? তিনি (সা.) উত্তর দিলেন তোমার পিতা’। (বুখারি, মুসলিম)
মহানবি (সা.) ঘোষণা করেছেন, ‘বেহেশত মায়ের পায়ের পদতলে অবস্থিত।’ অর্থাৎ মাকে যথাযোগ্য সম্মান দিলে, তার উপযুক্ত খিদমত করলে এবং তার হক আদায় করলে সন্তান বেহেশত লাভ করতে পারে। অন্য কথায়, সন্তানের বেহেশত লাভ মায়ের খেদমতের ওপর নির্ভরশীল। মায়ের খেদমত না করলে কিংবা মায়ের প্রতি কোনোরূপ খারাপ আচরণ করলে,
মাকে কষ্ট ও দুঃখ দিলে সন্তান যত ইবাদত বন্দেগি আর নেক কাজই করুক না কেন, তার পক্ষে বেহেশত লাভ করা সম্ভবপর হবে না। তাই প্রত্যেক সন্তানের উচিৎ মাকে নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসা এবং তার যত্ন নেওয়া।